Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

ছবি
শিরোনাম
চলনবিল ।
বিস্তারিত

      চলনবিলের অংশে পূর্বে হরেক রকম সুস্বাদু আমন ধানের আবাদ হত । তিল,কাউন,পাট প্রচুর পরিমাণে উৎপন্ন হত । ১৯৬৩-৬৪ সন থেকে নিমাইচড়া খাল কাটার পর উক্ত খালের দুপাশে বোরো ধানের আবাদ শুরু হয় । এখন অগণিত অগভীর নলকূপ ও কিছু কিছু গভীর নলকূপ দিয়ে আধুনিক পদ্ধতিতে ইরি-বোরো আবাদ করা হচ্ছে । এখানে প্রচুর পরিমাণে ধান উৎপাদন হয় ।এ মৌসুমে দেশের সিংহভাগ অভাব পূরণ করে থাকে চলনবিলের এই ধান । যে বছর কার্তিক মাসে চলনবিলের পানি নেমে যায় সে বছরে প্রচুর পরিমাণে সরিষার আবাদ হয় । মধু আরাহনকারীরা এ সময় মৌচাষ করে খাটি সরিষার মধু আরোহন করে সারা বছর মধুর অভাব পূরণ করে থাকেন । বর্ষায় এই এলাকা সাগরের মত দেখায় । ভয়ংকর আবর্তে মূর্ত হয় এসময় এ চলনবিল । বর্ষায় হাটের পথে সারি সারি পাল তোলা নৌকা, দূরে দাঁড় টানা ভাটিয়ালী মাঝিদের গানের সুরের মূর্ছনা ,ভটভট শব্দে যন্ত্রচালিত অসংখ্য নৌকার বহর ,জেলেদের ছোট ছোট নৌকা নিয়ে মাছ ধরার অপূর্ব দৃশ্য , দূরে মাঝে মাঝে ছোট ছোট গ্রাম নিয়ে এই সগুনা ইউনিয়ন।

 

আমাদের ইউনিয়নের আরো একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল একটি হিজল গাছ । যার বয়স প্রায় সাড়ে পাঁচ শত বছর । এখানে ২ টি গাছ ছিল , একটি গাছ বছর সাতেক আগে মরে গেছে । গাছটির বৈশিষ্ট্য হল চলনবিলের মাঝখানে এটি অবস্থিত । এটি যত বড় আকারের বর্ষাই হোকনা কেন পানিতে এর ডালপালা ডোবেনা । লোক মুখে শোনা যায় প্রায় সাড়ে পাচ শত বছর পূর্বে এর জন্ম । কথিত আছে বেহুলার নৌকা ডুবে নৌকার দুগোলই হতে গাছ দুটির জন্ম । কোন মানুষ ভয় করে গাছ ২ টি কাটতনা । ৮৮ বড় বন্যায়ও এ গাছগুলো ডুবেনি । হঠাৎ করে সাত বছর আগে একটি গাছ মরে যায় । দিব্যি এখনো একটি গাছ কালের স্বাক্ষী হিসেবে বেঁচে আছে । পানি বাড়ার সাথে সাথে গাছটির ডালপালা উপরে উঠে যায় আবার পানি কমার  সাথে সাথে ডালপালা নীচে নেমে আসে ।

 

 

       বর্ষায় মাঝিদের ভাটিয়ালী গানের মূর্ছণা ,শীতে চলনবিলের ছোট ছোট জলাভূমিতে ঝাঁক ঝাঁক হরেক রকম অতিথি পাখির কলরব,পৌষ-পার্বনে পিঠা খাওয়ার ধূম । দূরের হাট থেকে ফেরা গাড়োয়ানের গানের সুর সগুনা সন্তানদের স্মৃতিতে আমৃত্যু অম্লান থাকে । তাই সগুনার মাটিতে বেড়ে ওঠা সন্তান আজ বাংলার যে প্রান্তেই থাকুকনা কেন চলনবিল বিধৌত এ এলাকাকে কখনো ভুলতে পারেনা ।

বাংলাদেশের সবথেকে বড় বিল চলনবিল। ছোট বড় অনেক বিস্তৃত জলাশয় নিয়ে চলনবিল গঠিত, বর্ষাকালে যার আয়তন দাঁড়ায় প্রায় ৩৬৮ বর্গ কিলোমিটার। পার্শ্ববর্তী চারটি জেলা- রাজশাহী, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, এবং পাবনা জুড়ে এর বিস্তৃতি। সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ উপজেলা এবং পাবনার চাটমহর উপজেলার অধিকাংশ আংশ চলনবিলের মধ্যে পড়েছে। এর একপাশে নাটোরের সিংড়া উপজেলা, আরেক পাশে গুমনি নদী। চলন বিলের দক্ষিন পূর্ব দিকে পাবনা জেলার অস্টমনিষা, যেখানে গুমনি এবং বড়াল নদী মিশেছে। পাবনার তারাশ উপজলার একটা বড় অংশও চলনবিলের মধ্যে পড়েছে। প্রস্থে চলনবিল প্রায় ১৩ কিঃ মিঃ, তারাশ থেকে নারায়নপুর পর্যন্ত আর দৈর্ঘ্যে সিংড়া থেকে কাছিকাটা পর্যন্ত প্রায় ২৪ কিঃ মিঃ।বর্ষাকালে চলনবিলপূর্ব মধ্যনগর, পিপরুল, ডাঙ্গাপাড়া, লালোর, তাজপুর, মাঝগাঁও, সাতিল, দাড়িকুশি, খারদা, কাজীপাড়া, বেড়া, সোনাপাতিলা, ঘুগুডাঙ্গা, কুড়ালিয়া, চিরাল, দিকসি, গুরকা ইত্যাদি এলাকার লোকজনের জীবন চলনবিলের সাথে ওতপ্রত ভাবে জড়িত।পুরাতন ব্রহ্মপুত্র যখন গতিপথ পরিবর্তন করে যমুনার জন্ম হয় তখন চলনবিলের উৎপত্তি। সম্ভবত করতোয়া আর আত্রাই নদীর বিস্তৃত অংশ পরিত্যক্ত হয়ে বিশাল একটা জলাশয় এর সৃস্টি হয় হয়। চলনবিলের সৃস্টি ঐতিহাসিকভাবে আত্রাই এবং বড়াল নাদীর সাথেও জড়িত। আত্রাই নদী এই বিলের প্রধান পানি সরবরাহকারী নদী, অন্যদিকে বড়াল নদী দ্বারা এর পানি সরাসরি যমুনাতে নিস্কাষিত হয়। ধারনা করা হয় উৎপত্তির সময় চলনবিলের আয়তন ছিল প্রায় ১০৮৮ বর্গ কিঃ মিঃ।শুষ্ক মৌসুমে চলনবিলের অধিকাংশ এলাকা শুকিয়ে গিয়ে আয়তনে প্রায় ২৫ থেকে ৩১ বর্গ কিলোমিটারে নেমে আসে। যে অংশটুকু শুকায় না, সেটাই এই বিলের মূল অংশ। এই মূল অংশের পানি বিভিন্ন ক্যানেলের মাধ্যমে আশে পাশে আরও কিছুদুর সঞ্চালন করে ধান চাষ করা হয়। ধানই চলনবিল অঞ্চলের মানুষের প্রধান আবাদী ফসল। এছাড়া পাট চাষও হয়ে থাকে। বর্ষাকালে কিছু মানুষ মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে।চলনবিল খুব দ্রুত শুকিয়ে যাচ্ছে। গত শাতাব্দীতে এর দক্ষিন অংশের প্রায় ১৯ বর্গ কিঃ মিঃ এলাকা শুকিয়ে গেছে পদ্মা নদী বাহিত পলিমাটি জমার কারনে। ১৯০৯ সালে পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্ট দ্বারা পরিচালিত একটি জরিপে দেখা যায় এর আসল আয়তন ১০৮৮ বর্গ কিঃ মিঃ শুকিয়ে গিয়ে দাঁড়ায় প্রায় ৩৬৮ বর্গ কিঃ মিঃ তে। বাকি অংশ হয় বসতি স্থাপনের কারনে অথবা কৃষিকাজের জন্য সঙ্কুচিত হয়ে গেছে। কিন্তু এই অবস্থাতেও প্রায় ৮৬ বর্গ কিঃ মিঃ এলাকা বছরের সবসময় জলমগ্ন থাকে। জরিপে আরও দেখা গেছে যে, পানি সরবরাহকারী নদী দ্বারা বৎসরে প্রায় ৬.৩ মিলিয়ন ঘনফুট পলি জমা হয় আর ১.৫ মিলিয়ন ঘনফুট পলি বিভিন্ন নদী বা ক্যানেল দিয়ে বের হয়ে যায়। অর্থাৎ বছরে প্রায় ৪.৮ মিলিয়ন ঘনফুট পলি জমা হয় এই বিলে। এই পলি যদি ৩৬৮ বর্গ কিঃ মিঃ এলাকায় সমভাবে বিস্তৃত করে দেয়া হয় তাহলে প্রতি বৎসর এর উচ্চতা প্রায় ১.২৭ সেঃ মিঃ করে বৃদ্ধি পায়। বিলের শুষ্ক মৌসুমের আবস্থা পর্যালোচনার জন্য ১৯১০ সালে আরেকটি জরিপ পরিচালিত হয় এবং সেখানেও দেখা যায় যে, বিলের আয়তন হ্রাস পাচ্ছে। ১৯১৩ সালে পরিচালিত ৩য় জরিপে দেখা যায় যে ৩১ থেকে ৩৯ বর্গ কিঃ মিঃ এলাকা বছরের সবসময় পানির নীচে থাকে। ১৯৫০ সালের এপ্রিল মাসের দিকে বিলের মূল এলাকায় পানির গভীরতা মাপা হয় ২.৭৫ থেকে ৫.৪৯ মিটার। ১৯৮৭ সালে দেখা যায় শুষ্ক মৌসুমে শুধুমাত্র কিছু পুকুর আর ক্যানেল ছাড়া বাকি অংশ প্রায় পুরাটাই শুকিয়ে যায়।

    বনপাড়া হাটিকুমরুল বিশ্ব রোড তৈরীর ফলে এর কিছুটা ভাটা পড়েছে । তবে বর্ষার সময় ৯ ও ৮ ব্রিজ নামক স্থানে বিকালে হাওয়া খাওয়ার ধুম পরে যায় । ইচ্ছা করলে আপনিই এখানে এসে মিনি কক্সবাজার খ্যাত চলনবিল ভ্রমণ করতে পারেন । আপনি যদি ঢাকা বা পূর্ববঙ্গ থেকে যাত্রা করেন তাহলে সরাসরি ১০ ব্রিজ বা কাছিকাো নামলে চলনবিল ঘুরে ঘুরে দেখতে পারবেন এর চিরায়ত রূপ । আর যদি দক্ষিণবঙ্গ থেকে যাত্রা করেন তাহলেও একইভাবে এই ২ টি স্থানের যে কোন যায়গায় নেমে অনায়াশে চলনবিল ভ্রমণ করতে পারবেন ।